সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬

রেফারেন্স দেওয়ার স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি (Auto Referencing)

লেখক গবেষণা-প্রবন্ধে তাঁর প্রতিটি বক্তব্য বা তথ্যের উৎস উল্লেখ করে থাকেন অনেক সময় গবেষককে তাঁর বক্তব্যের পক্ষে প্রমাণও উপস্থাপন করতে হয় গবেষণাত্রে বা প্রবন্ধে এসব উৎস প্রমাণপত্র উপস্থাপনের পদ্ধতিকে রেফারেন্স বলে রেফারেন্স প্রধানত দুই ধরনের- . নোট রেফারেন্স এবং . প্যারেনথেটিক্যাল রেফারেন্স টেক্সটের বা লেখার যেখানে রেফারেন্স উল্লেখ করা প্রয়োজন সেখানে একটি শিরো-সংখ্যা বা চিহ্ন দিয়ে পাতার শেষ অংশে অথবা সম্পূর্ণ টেক্সটের শেষে রেফান্সের উৎস বা প্রমাণ উপস্থাপন করতে হয় রেফারেন্সের অবস্থানের ভিত্তিতে নোট রেফারেন্স দুপ্রকার যথা: . ফুটনোট বা পাদটীকা এবং . ইন্ডনোট বা প্রান্তটীকা ম্যানুয়ালি একটি প্রবন্ধে ফুটনোট বা ইন্ডনোট দেওয়া অনেক কষ্টকর, পেজসেটাপ দেওয়াও প্রায় অসম্ভব বিশেষত দুটি রেফারেন্সের মাঝে যদি নতুন কোন রেফারেন্স দিতে হয় তখন গবেষককে নতুন রেফারেন্সের পরবর্তী সকল শিরোসংখ্যা পরিবর্তন করতে হয় একটা একটা করে আবার, যদি কোন কারণে গবেষক ধরুন নম্বর রেফারেন্স বাদ দিতে চান তাহলে তাঁকে নম্বরকে পরিবর্তন করতে হয় একইভাবে সমগ্র প্রবন্ধের পরবর্তী সকল নম্বরই পরিবর্তন করতে হয় কিন্তু গবেষক যদি স্বয়ংক্রিয় (auto referencing) রেফারেন্স ব্যবহার করেন, তাহলে এসব বিড়ম্বনা হয় না যেকোন স্থানে নতুন রেফারেন্স যুক্ত করলে বা কোন রেফারেন্স বাদ দিতে চাইলে সংক্রিয়ভাবে পরবর্তী সংখ্যাসমূহ পরিবর্তন হয়ে যায় শুধু তাই নয় বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে রেফান্সের নম্বর পরিবর্তনের সাথে সাথে বাদকৃত রেফান্সের তথ্যসমূহও মুছে যায়আসুন মাত্র কয়েটি ধাপে জেনে নেওয়া যাক- কীভাবে সংক্রিয়ভাবে রেফারেন্স দিতে হয় 
[ উদাহরণের জন্য যে ছবি ব্যবহৃত হয়েছে, তা উইন্ডোজ সেভেন-এর জন্য প্রযোজ্য]
চিত্র ১

প্রথম ধাপ: প্রথমে একটি এম.এস. ওয়ার্ডের ফাইল ওপেন করুন। এর পর মেনুবারের References ক্লিক করুন (চিত্র ১)। 
চিত্র ২
এবার দ্বিতীয় চিত্র অনুসারে References-এর নিচে ডান কোণের ছোট এ্যারো চিহ্নে ক্লিক করুন। সেখানে ক্লিক করলে Footnote and Endnote নামের একটি ডায়লগ বক্স আসবে (চিত্র ৩)
চিত্র ৩
 (চিত্র ৩)এখনে Footnote সিলেক্ট করুন। একইভাবে সিলেক্ট করুন Bottom of page, নাম্বার ফরম্যাট-এর 1,2,3,.., স্টার্ট  এ্যট-এর 1 এবং শেষে Apply- ক্লিক করুন। যদি এসব সিলেক্ট করা থাকে (সাধারণত থাকে) তাহলে আপনাকে কিছুই করতে হবে না। এখন আপনি আপনার ফাইলে লিখতে থাকুন। যেখানে রেফারেন্স দিতে চান সেখানে কার্সার রাখুন। 

চিত্র ৪
যেমন উপরের ছবিতে “... ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায় দেখিয়েছেন। বাক্যের শেষে দাঁড়ির পর ক্লিক করুন।তাহলেই সেখানে কার্সার থাকবে(চিত্র ৪)

চিত্র ৫
আপনি কী বোর্ডে ক্রমান্বয়ে Ctrl , Alt  এবং F চাপুন (চিত্র ৫) দেখুন আপনার সাফল্য

চিত্র ৬
দেখবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত শব্দের পর এবং পাতার নিম্নাংশেও রেফারেন্স নম্বর যুক্ত হয়েছে (চিত্র ৬)। নিচের নম্বর ইংরেজিতে আসবে। সমস্যা নাই আপনি তা সিলেক্টে করে ফন্ট পরিবর্তন করে নিতে পারেন। নম্বরও অটো বাংলা করা যায়। তার জন্য আরো কয়েকটি ধাপ জানতে হবে।  তা পরের কোন পর্বে শেখা যাবে

এর পর দেখুন কিভাবে দুটি রেফারেন্সের মাঝে নতুন রেফান্স যুক্ত করলে পরবর্তী নম্বরসমূহ পরিবর্তিত হয়
চিত্র ৭
ধরুন আপনি   এবং দু্ই রেফারেন্স নম্বরের মাঝেহতে পারশব্দের পর নতুন রেফারেন্স দিতে চান (চিত্র ৭); তাহলে আবার সেখানে কার্সার রেখে Ctrl+Alt+F চাপুন। 

চিত্র ৮

দেখুনহতে পারে’-এর পর রেফারেন্স নম্বর এসেছে এবং একই ভাবে নিচেও নতুন নম্বর সংযুক্ত হয়েছে(চিত্র ৮)। সাথে সাথে পরবর্তী নম্বরসমূহও পরিবর্তিত হয়েছে। এভাবে কোন রেফারেন্স বাদ দিতে চাইলে টেক্সটের নম্বরটি ডিলিট করে দিলেই নিচের নম্বরসহ তথ্য মুছে যাবে এবং পরবর্তী নম্বরসমূহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তিত হবে


বাঙালির শব্দ-প্রীতি: প্রসঙ্গ 'International'

আমরা বাঙালি বরাবরই বিদেশী ভাষা, সংস্কৃতি, দ্রব্য-পণ্য, ডিগ্রি, আইন-কানুন, প্রকৃতি, প্রযুক্তসহ সবই এবং সাদা চামড়ার মানুষের প্রতি বড়ই দূর্বল। শুধু দূর্বলই নয়, শ্রেষ্ঠ মনে করতেও দ্বিধা করি না।সম্ভবত এ কারণেই আমরা ‘International’ শব্দের প্রতি যে প্রীতি প্রদর্শন করি তা অভাবনীয়। বাংলাদেশ সম্ভবত এ দিক থেকে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দেশ, যেখানে মনে হয় সর্বাধিক ‘International’ স্কুল রয়েছে।ঠিক কী কারণে স্কুলকে International বলা হচ্ছে- সেটা গুণে-মানে না আকার-পরিসরে, না বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির কারণে; তা মনে হয় ঐ স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকত বটেই এমনকি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা বা উদ্যোক্তাগণও বলতে পারবেন বলে মনে হয় না। প্রায় ক্ষেত্রে মেলা, সেমিনার, কর্মশালা, সিম্পোজিয়ামেও International শব্দের ব্যবহার লক্ষণীয়। তবে সেক্ষেত্রে বিদেশীদের সংশ্লিষ্টতা থাকে। তবে সর্বাপেক্ষা মজার বিষয় দেশে International ইউনিভার্সিটির সংখ্যাও কম নয়। ইউনিভার্সিটি’র বাংলা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু কিছুতেই বুঝা যায় না কীভাবে International শব্দের সাথে University যুক্ত হতে পারে? University’র মধ্যেই ত universal বিষয় রয়েছে। অবাক করার বিষয় দেশে World Universityও রয়েছে ! ভাগ্যিস International শব্দযুক্ত হয়নি। স্কুলের নাম না হয় বাদ দিলাম; বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার জন্য নামসহ অন্যান্য বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও সরকারের অনুমতি নিতে হয়- তবু এসব নাম অনুমোদিত! মনে হয় International শব্দ-প্রীতি সর্বোচ্চ পর্যায়েও কম নয়।যেন প্রেম-প্রীতি-আবেগ, ভালোবাসায় ব্যকরণ কোন বিবেচ্য বিষয় নয়!

দ্র. () বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তাদের ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তিনভাগে বিভক্ত করে তালিকা প্রকাশ করেছে। ১. সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় (৩৭ টি), ২. বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় (৯২) এবং ৩. আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় (৩ টি)। উল্লেখ করার বিষয়‍ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নামের সাথে International শব্দযুক্ত না্ই- একটিরও । আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে International যুক্ত আছে ১৫টিতে।আর তিনটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিতেও International শব্দ যুক্ত হয়নি। এখন কিভাবে বুঝবেন কোনটি International বিশ্ববিদ্যালয়।

()বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ব্যক্তি নাম ব্যতীত মাত্র ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে বাংলা বা বাংলা সংশ্লিষ্ট শব্দ (গণ, বরেন্দ্র, পুণ্ড্র, সোনারগাঁও, হামদর্দ ও উত্তরা)ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু বাংলা নাম একটির- গণ বিশ্ববিদ্যালয়; বাকি সবগুলোই University। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো কিছু বিচিত্র নাম রয়েছে। যেমন: Exim Bank Agricultural University, Britannia University, Canadian University of Bangladesh, German University Bangladesh, The Millennium University, Stamford University – এ সবের মানে কি?আরো আছে Modern University (তার মানে অন্যরা অনাধুনিক!)।

বি. দ্র. ১৯২১ খ্রি. ঢাকায় যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়, তার নাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় না ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা? একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম যদি হয় University of Chittagong University of Rajshahi, তাহলে আমরা কি ‘নাম’ অনুবাদ করে বলি ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’?